সোমবারের ট্রেডের বিশ্লেষণ
EUR/USD পেয়ারের 1H চার্ট
সোমবার একেবারে স্পষ্ট, যুক্তিসঙ্গত ও ধারাবাহিক কারণে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের দরপতন ঘটে। সারাদিনের মূল ইভেন্টটি ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন ঘোষণা দিয়েছেন। ঠিক এই চুক্তির প্রাথমিক বিবরণ প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ইউরোর মূল্য ধস নামে। এই দরপতনের পেছনে অন্তত দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
প্রথমত, বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হওয়ার কারণে আগে ডলার দুর্বল হয়েছিল, ফলে বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমিত হলে ডলারের শক্তিশালী হওয়া স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত, এই চুক্তি শুধুমাত্র একটি পক্ষের জন্যই লাভজনক ছিল—এবং সেটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়। প্রকাশিত শর্তগুলো এতটাই কড়াকড়িভাবে ব্রাসেলসের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এই তথাকথিত "রূপকথার চুক্তি" স্বাক্ষর করার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই উরসুলা ভন ডার লায়েন ইউরোপে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। এর ফলেই দৈনিক টাইমফ্রেমে এই পেয়ারের মূল্যের একটি নতুন নিম্নমুখী কারেকশন শুরু হয়, যা লোয়ার টাইমফ্রেমগুলোতে নতুন স্থানীয় নিম্নমুখী প্রবণতা হিসেবে প্রতীয়মান হয়। যদি এই পেয়ারের মূল্য 1.1563 লেভেলের নিচে স্থায়ীভাবে স্থির হয়, তাহলে ইউরোর দরপতনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকার ইঙ্গিত মিলবে।
EUR/USD পেয়ারের 5M চার্ট
৫-মিনিটের টাইমফ্রেমে সোমবার দুটি চমৎকার সেল সিগন্যাল তৈরি হয় এবং এই পেয়ারের মূল্যের দৈনিক মুভমেন্ট যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। ইউরোপীয় সেশনের শুরুতে, এই পেয়ারের মূল্য 1.1740–1.1745 এরিয়ার নিচে স্থির হয় এবং মার্কিন সেশনের শুরুতে মূল্য 1.1655–1.1666 এরিয়ার নিচে নেমে আসে। ফলে, নতুন ট্রেডাররা যেকোনো একটি সিগন্যাল থেকে শর্ট পজিশনে এন্ট্রি করে সন্ধ্যার মধ্যেই লাভ নিশ্চিত করতে পারতেন।
মঙ্গলবারের ট্রেডিংয়ের কৌশল:
ঘন্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে, আবার EUR/USD পেয়ারের নিম্নমুখী মুভমেন্ট শুরু হয়েছে, যা মূলত কারেকশন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এটি ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির সংবাদের প্রতিক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যেহেতু ট্রাম্পের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের সাথে দ্বন্দ ও বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়গুলো এখনো প্রাসঙ্গিক, সেহেতু দীর্ঘমেয়াদে ডলার শক্তিশালী হওয়ার মতো কোনো মধ্য-মেয়াদী মৌলিক কারণ আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তাই স্বল্পমেয়াদে ডলারের দর কিছুটা বাড়লেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি টেকসই হবে না বলেই মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার স্থানীয় পর্যায়ে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের বিয়ারিশ কারেকশন আরও প্রসারিত করতে পারে, এবং আমরা নতুন ট্রেডারদের 1.1563–1.1571 এরিয়াটি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিচ্ছি। এই এরিয়া থেকে বাউন্স হলে মূল্যের 1.1655–1.1666-এর দিকে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে লং পজিশন ওপেন করা যেতে পারে। কিন্তু যদি এই পেয়ারের মূল্য এই এরিয়ার নিচে কনসোলিডেট করে, তাহলে আবার শর্ট পজিশনের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে—এক্ষেত্রে থাকবে 1.1527 এবং 1.1474-এর লেভেল।
৫-মিনিটের চার্টে পর্যবেক্ষণযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হলো: 1.1198–1.1218, 1.1267–1.1292, 1.1354–1.1363, 1.1413, 1.1455–1.1474, 1.1527, 1.1563–1.1571, 1.1655–1.1666, 1.1740–1.1745, 1.1808, 1.1851, 1.1908।
মঙ্গলবারের একমাত্র উল্লেখযোগ্য সামষ্টিক প্রতিবেদন হবে যুক্তরাষ্ট্রের JOLTs থেকে প্রকাশিতব্য প্রতিবেদন, যা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তবে, মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা এখনো সোমবারের বাণিজ্য চুক্তির প্রভাব মূল্যায়ন করছে এবং FOMC-এর আসন্ন বৈঠক ও গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ট্রেডিং সিস্টেমের মূল নিয়মাবলী:
- সিগনালের শক্তি: যত দ্রুত একটি সিগন্যাল (রিবাউন্ড বা ব্রেকআউট) গঠিত হয়, সিগন্যালটিকে ততই শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- ভুল সিগন্যাল: যদি কোনো লেভেলের কাছে দুই বা ততোধিক ভুল ট্রেডিং সিগনাল গঠিত হয়, তাহলে ঐ লেভেল থেকে প্রাপ্ত পরবর্তী সিগন্যালগুলোকে উপেক্ষা করা উচিত।
- ফ্ল্যাট মার্কেট: যখন মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্ট দেখা যায়, তখন পেয়ারগুলোতে একাধিক ভুল সিগন্যাল গঠিত হতে পারে অথবা কোনো সিগন্যাল না-ও গঠিত হতে পারে। মার্কেটে ফ্ল্যাট মুভমেন্টের ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ট্রেডিং বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
- ট্রেডিংয়ের সময়সূচী: ইউরোপীয় সেশন শুরু থেকে মার্কিন সেশনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ট্রেড ওপেন করুন এবং এরপর সকল ট্রেড ম্যানুয়ালি ক্লোজ করে ফেলুন।
- MACD সিগন্যাল: ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে কেবল সেই MACD সিগন্যালগুলোর ওপর ভিত্তি করে ট্রেড করুন, যেগুলো উচ্চ মাত্রার অস্থিরতা এবং ট্রেন্ডলাইন বা ট্রেন্ড চ্যানেলের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রবণতা হিসেবে বিবেচিত।
- নিকটতম লেভেল: যদি দুটি লেভেল খুব কাছাকাছি (৫–২০ পিপসের মধ্যে) অবস্থিত হয়, তাহলে সেগুলোকে সাপোর্ট বা রেজিস্ট্যান্স জোন হিসেবে বিবেচনা করুন।
- স্টপ লস: মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকের দিকে ১৫ পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করলে, ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করুন। এতে করে ভুল সিগন্যালের কারণে লোকসানের ঝুঁকি কমে আসে।
চার্টের মূল উপাদান:
সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল: এই লেভেলগুলো পজিশন ওপেন বা ক্লোজ করার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং টেক প্রফিট সেট করার ক্ষেত্রেও উপযোগী।
লাল লাইনসমূহ: চ্যানেল বা ট্রেন্ডলাইন, যা বর্তমান প্রবণতা এবং ট্রেডের সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা প্রদান করে।
MACD ইনডিকেটর (14,22,3): হিস্টোগ্রাম এবং সিগন্যাল লাইন বিশ্লেষণের জন্য একটি অতিরিক্ত ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট ও প্রতিবেদন: এই তথ্যগুলো অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে পাওয়া যায় এবং মূল্যের মুভমেন্টে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশের সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন বা মার্কেট থেকে বেরিয়ে আসুন, যাতে হঠাৎ করে মূল্যের রিভার্সাল বা বিপরীতমুখী হওয়ার প্রবণতা এড়ানো যায়।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ে নতুন ট্রেডারদের মনে রাখতে হবে প্রতিটি ট্রেড লাভজনক হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ট্রেডিংয়ে সফলতা অর্জনের জন্য একটি সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।