EUR/USD পেয়ারের 5-মিনিটের চার্টের বিশ্লেষণ
সোমবারের সেশনে EUR/USD কারেন্সি পেয়ারের মূল্য দুই দিকেই গতিশীল ছিল। প্রথমে ইরান- ইসরায়েল যুদ্ধের ফলে এই পেয়ারের তীব্র দরপতন ঘটে (যারা তখন ঘুমিয়ে ছিলেন না, তারা এটি লক্ষ করেছিলেন)। এরপর এই পেয়ারের মূল্য তুলনামূলকভাবে শক্তিশালীভাবে পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু এই পুনরুদ্ধার ঘটল কেন? ডলার কেন আরও শক্তিশালী হতে পারেনি? মার্কেটের ট্রেডাররা খুব দ্রুতই একটি সহজ সত্য মনে করিয়ে দিল—ডলারকে আর "নিরাপদ বিনিয়োগ" হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।
আগে কী হতো? যখন কোনো নতুন ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হতো, তখন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো থেকে পুঁজি দ্রুত বাইরে চলে যেত। আর সেই পুঁজি স্থানান্তর করতে প্রয়োজন হতো বিদেশি মুদ্রা—ইউরো, ডলার, পাউন্ড। যেহেতু মার্কিন অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে স্থিতিশীল এবং সর্বোচ্চ ক্রেডিট রেটিংধারী হিসেবে বিবেচিত ছিল, তাই ডলারের চাহিদা বেড়ে যেত এবং এটির দরও বৃদ্ধি পেত।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি কেমন? এখন মার্কেটের ট্রেডাররা মার্কিন অর্থনীতিকে আর স্থিতিশীল বা সম্ভাবনাময় বলে মনে করে না, এবং দেশটির সরকারও আর যুক্তরাষ্ট্রকে "মহান ভবিষ্যতের" দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেও কেউ মনে করে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন ইয়েন, পাউন্ড বা ইউরো কিনতে বেশি আগ্রহী। এ কারণেই ডলারের দর দ্রুত প্রাথমিক অবস্থানে ফিরে যায়।
সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের দিক থেকে, জার্মানির মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনের ফলাফল তেমন কোনো আগ্রহ সৃষ্টি করেনি, কারণ এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পূর্বাভাস প্রথমটির মতোই ছিল। ইউরোজোনের শিল্প উৎপাদন আবারও প্রত্যাশানুযায়ী হ্রাস পেয়েছে এবং পূর্বাভাসের চেয়েও নিম্নমুখী ছিল। সকালে ইউরো আরও দরপতনের শিকার হতে পারত, কিন্তু আগে বলা হয়েছে, বর্তমানে কেউ ডলার কেনার ব্যাপারে আগ্রহী নয়।
শুক্রবারের ট্রেডিং সিগন্যালগুলো খুব একটা সহায়ক ছিল না। সারাদিন ধরে এই পেয়ারের মূল্য ঘন ঘন দিক পরিবর্তন করেছে, যার ফলে লেভেল এবং লাইনগুলো যথার্থ ছিল না। আজকেও অনুরূপ পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে, কারণ মার্কেটের ট্রেডাররা এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্পের পদক্ষেপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের পুনরায় উত্তপ্ত সংঘাত দ্বারা আবেগপ্রবণভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। দিনের বেলায় আবারও টেকনিক্যাল লেভেল এবং ইচিমোকু ইন্ডিকেটরকে উপেক্ষা করে এই পেয়ারের মূল্যের তীব্র মুভমেন্ট ও ঘন ঘন রিভার্সাল দেখাতে পারে। তবুও, প্রশ্নাতীতভাবে এই পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
COT রিপোর্ট
সর্বশেষ COT রিপোর্টটি 10 জুন প্রকাশিত হয়েছে। উপরের চার্টে যেমনটি দেখা যাচ্ছে, নন-কমার্শিয়াল ট্রেডারদের নিট পজিশন দীর্ঘদিন ধরেই বুলিশ রয়েছে। 2024 সালের শেষদিকে বিক্রেতারা অল্প সময়ের জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল, তবে তারা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ডলারের কেবল দরপতনই লক্ষ্য করা গেছে।
আমরা 100% নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে ডলারের দরপতন অব্যাহত থাকবে, তবে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি অনুযায়ী সম্ভবত তাই হবে।
আমরা এখনো ইউরোর ক্ষেত্রে মৌলিক প্রেক্ষাপট থেকে কোনো সহায়তা দেখতে পাচ্ছি না, তবে ডলারের দরপতন অব্যাহত থাকার একটি শক্তিশালী কারণ এখনো বিদ্যমান। বৈশ্বিক পর্যায়ে এই পেয়ারের মূল্যের নিম্নমুখী প্রবণতা এখনো অব্যাহত রয়েছে, কিন্তু এখন কে আর মূল্যের 16 বছরের ইতিহাস নিয়ে ভাবে? যদি ট্রাম্প বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করেন, তবে ডলারের দর আবারও বাড়তে পারে — কিন্তু তিনি আদৌ কি তা শেষ করবেন? আর করকে কবে শেষ করবেন?
লাল এবং নীল লাইন আবারও একে অপরকে ছেদ করেছে, যার মানে হলো মার্কেটে আবারও বুলিশ প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ সাপ্তাহিক রিপোর্ট অনুযায়ী "নন-কমার্শিয়াল" গ্রুপের লং পজিশন 6,000 ইউনিট বেড়েছে, এবং শর্ট পজিশন 4,300 ইউনিট কমেছে। সুতরাং, সপ্তাহজুড়ে নিট পজিশনের সংখ্যা 10,300 ইউনিট বৃদ্ধি পেয়েছে।
EUR/USD পেয়ারের 1 ঘন্টার চার্টের বিশ্লেষণ
ঘন্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে এখনো স্থানীয় পর্যায়ে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রয়েছে, যদিও মূল্য আগের সব সম্ভাব্য অ্যাসেন্ডিং ট্রেন্ড লাইনের ব্রেকআউট ও অতিক্রম করেছে। আগের মতোই (গত চার মাস ধরে), মার্কেটের ট্রেডাররা কেবল ট্রাম্প-সম্পর্কিত ঘটনা, তার সিদ্ধান্ত এবং বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে। এখন এই "চমৎকার ও ইতিবাচক প্যাকেজে" যোগ হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ। কোনো ভালো খবর নেই, কেবল খারাপ খবর আসছে — এবং তার সংখ্যাও প্রচুর। তাই ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
16 জুন ট্রেডিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেভেলগুলো হলো — 1.1092, 1.1147, 1.1185, 1.1234, 1.1274, 1.1362, 1.1426, 1.1534, 1.1615, 1.1666, 1.1704, 1.1750, পাশাপাশি সেনকৌ স্প্যান B (1.1353) এবং কিজুন-সেন (1.1501) লাইন রয়েছে। ইচিমোকু ইন্ডিকেটরের লাইনগুলো দিনের বেলা অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে, তাই ট্রেডিং সিগন্যাল নির্ধারণের সময় এটি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। মনে রাখবেন, যখন মূল্য কাঙ্ক্ষিত দিকেই 15 পিপস মুভমেন্ট প্রদর্শন করবে, তখন ব্রেকইভেনে স্টপ লস সেট করতে হবে — এর ফলে ভুল সিগন্যালের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য লোকসান এড়ানো যাবে।
সোমবার ইউরোজোন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট বা প্রতিবেদনের প্রকাশনা নির্ধারিত নেই, তবে দিনের মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য কিছু না কিছু ঘটবে। অন্ততপক্ষে, মার্কেটের ট্রেডাররা ইরানের পাল্টা আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। আমাদের ধারণা, আজ আর "একঘেয়ে সোমবার" দেখা যাবে না।
চিত্রের ব্যাখা:
- মূল্যের সাপোর্ট ও রেজিস্ট্যান্স লেভেল – গাঢ় লাল লাইন; যেখানে মূল্যের মুভমেন্ট থেমে যেতে পারে। তবে এগুলো সরাসরি ট্রেডিং সিগন্যাল নয়।
- কিজুন সেন ও সেনকৌ স্প্যান বি লাইন – শক্তিশালী ইচিমোকু ইন্ডিকেটরের লাইন, যা ৪-ঘণ্টা চার্ট থেকে ঘণ্টাভিত্তিক টাইমফ্রেমে স্থানান্তর করা হয়েছে।
- এক্সট্রিম লেভেল – হালকা লাল লাইন; যেখানে পূর্বে মূল্য রিবাউন্ড করেছে। এগুলো ট্রেডিং সিগন্যালের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।
- হলুদ লাইন – ট্রেন্ড লাইন, ট্রেন্ড চ্যানেল এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল প্যাটার্ন নির্দেশ করে।
- COT ইন্ডিকেটর 1 – চার্টে প্রতিটি গ্রুপের ট্রেডারদের নিট পজিশনের পরিমাণ প্রদর্শন করে।