চলতি সপ্তাহে মার্কেটে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা নিরসনের সম্ভাবনা রয়েছে। এটি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ, যখন ডলারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হয়। ফলে, দ্রুতই নতুন করে EUR/USD পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার
সোমবারের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডারে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কিছু নেই। কেবল ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডে এবং বুন্দেসব্যাংক প্রেসিডেন্ট জোয়াখিম নাগেলের বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হবে। তাছাড়া, মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্কেট বন্ধ থাকবে।
তবে এর মানে এই নয় যে EUR/USD পেয়ারের মূল্য একই রেঞ্জের মধ্যেই থাকবে। প্রথমত, ট্রেডাররা রবিবার (০৮:৪০ EST) অনুষ্ঠিত জেরোম পাওয়েলের বক্তৃতার প্রতিক্রিয়া জানাবে। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো ট্রাম্পের সেই বিবৃতি, যেখানে তিনি ১ জুন থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছেন। এই ঘোষণা শুক্রবার মার্কিন সেশনের শেষ দিকে আসে, ফলে সোমবার EUR/USD-এর উপর এই ঘোষণার প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। সপ্তাহান্তে ব্রাসেলস এই বিবৃতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। ইইউ-র বাণিজ্য কমিশনার মারোস শেফচোভিচ বলেন, ইইউ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্য "অতুলনীয়" এবং এটি "পারস্পরিক সম্মানভিত্তিক হওয়া উচিত, হুমকি নয়।" তিনি আরও জানান, ইইউ নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে এপ্রিল থেকেই পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
সারসংক্ষেপে, যদিও ক্যালেন্ডারে তেমন কিছু নেই ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি রয়েছে, সপ্তাহের শুরুতে এই পেয়ারের মূল্যের অস্থিরতার মাত্রা অনেকটাই বাড়তে পারে।
মঙ্গলবার
মঙ্গলবার মার্কিন সেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। ট্রেডারদের মূল দৃষ্টি থাকবে এপ্রিলের ডিউরেবল গুডস অর্ডার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ওপর। মার্চে ৭.৫% বৃদ্ধির পর, এপ্রিলে ৭.৯% হ্রাসের পূর্বাভাস রয়েছে। পরিবহন ব্যতীত অর্ডার ০.১% হ্রাস পেতে পারে।
কনফারেন্স বোর্ড থেকে কনজ্যুমার কনফিডেন্স ইনডেক্স বা ভোক্তা আস্থা সূচকও প্রকাশিত হবে। সূচকটি টানা পাঁচ মাস ধরে কমেছে, এপ্রিলের ফলাফল ছিল ৮৬.০, যা মে ২০২০-এর পর সর্বনিম্ন। মে মাসের পূর্বাভাস ৮৭.১ হলেও, যদি এটি আবারও হ্রাস পায় (৮৬.০-এর নিচে আসে), তাহলে ডলার চাপের মুখে পড়তে পারে। এর আগে ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের কনজ্যুমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্স ৫০.৮-এ নেমে আসে, যা ছিল ২০২২ সালের জুনের পর সর্বনিম্ন। ভোক্তা আস্থা সূচকের দুর্বল ফলাফল ডলারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বাড়িয়ে তুলবে, বিশেষ করে যখন মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির প্রত্যাশা ও নতুন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
বুধবার
বুধবার মে মাসের FOMC-এর বৈঠকের মিনিট বা কার্যবিবরণী প্রকাশিত হবে। ওই বৈঠকে ফেড নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনেনি। জেরোম পাওয়েল বলেছিলেন, নতুন শুল্ক অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে তা স্পষ্ট নয়, তাই তারা অপেক্ষা করছে। প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি কমে যাওয়ার বিষয়টিও তিনি গুরুত্ব দেননি।
মিনিটসেও একই ধরনের বার্তা প্রত্যাশিত: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে। যত বেশি উদ্বেগ থাকবে, তত বেশি ডলারের ওপর চাপ বাড়বে। তবে মিনিটসের প্রভাব তখনই দৃশ্যমান হবে যদি তা পাওয়েলের মন্তব্য বা অফিসিয়াল বিবৃতি থেকে ভিন্ন হয়।
আজ রিচমন্ড ফেড ম্যানুফ্যাকচারিং ইনডেক্স বা উৎপাদন সূচকও প্রকাশিত হবে। এপ্রিলে এই সূচক ছিল -১৩, মে মাসে এটি -৯-এ উন্নীত হতে পারে, তবে তা এখনো নেতিবাচক থাকবে। এই প্রতিবেদন তখনই ডলারকে সহায়তা করতে পারে যদি এটি অপ্রত্যাশিতভাবে ইতিবাচক মানে চলে আসে, যে সম্ভাবনা কম।
এছাড়া, ফেডের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার (ভোটাধিকারসম্পন্ন) এবং মিনিয়াপলিস ফেডের প্রেসিডেন্ট নিল কাশকারি (চলতি বছরে ভোটাধিকার নেই) বক্তৃতা দেবেন।
বৃহস্পতিবার
২৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রান্তিকের জিডিপির দ্বিতীয় অনুমান প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক অনুমানে দেখা যায় প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপির ০.৩% সংকোচন ঘটেছে, যদিও ২০২৪-এর প্রথম প্রান্তিকে ২.৪% প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। বিশ্লেষকরা আশা করছেন দ্বিতীয় অনুমানে একই চিত্র দেখা যাবে। যদি এই প্রতিবেদনের ফলাফল নিম্নমুখী হয়, তবে ডলার আরও চাপের মধ্যে পড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা সংক্রান্ত আলোচনা ফিরে আসবে।
তবে মার্কেটে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, কারণ প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সংকোচনের প্রধান কারণ ছিল ৪১% আমদানি বৃদ্ধি, যেটা নতুন শুল্কের আগে কোম্পানিগুলোর স্টক মজুদের ফলাফল। তাই ফলাফল সংশোধন করা হলেও এর প্রভাব স্বল্পমেয়াদি হতে পারে।
এছাড়া এপ্রিল মাসের পেন্ডিং হোম সেলস বা অপেক্ষামান আবাসন বিক্রয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। মার্চে ৬.১% বৃদ্ধির পর, এপ্রিলের জন্য ১.০% হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার
সপ্তাহের শেষ দিনের ট্রেডিংয়ে এপ্রিলের কোর PCE প্রাইস ইনডেক্স প্রকাশিত হবে — এটি মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের জন্য ফেডের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে ৩.০%-এ পৌঁছানোর পর, মার্চে এটি ২.৬%-এ নেমে আসে। এপ্রিলের পূর্বাভাস হলো ২.৮%। এটি ফেডের ধৈর্যশীল দৃষ্টিভঙ্গিকে শক্তিশালী করবে, অর্থাৎ জুন ও জুলাইয়ে নীতিগত কোনো পরিবর্তন না আসার সম্ভাবনা বাড়বে।
ফেডের অবস্থান যদিও "হকিশ বা কঠোর" হতে পারে, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে — যেখানে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হচ্ছে — সেক্ষেত্রে এর প্রভাব সীমিত হতে পারে। স্ট্যাগফ্লেশন বা অর্থনৈতিক স্থবিরতার আশঙ্কা ডলারের ওপর চাপ বজায় রাখবে।
উপসংহার
এই সপ্তাহে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইভেন্ট রয়েছে ও সেইসাথে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে, তবে বাণিজ্যযুদ্ধ সম্পর্কিত পরিস্থিতি সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে। যদি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতি হয় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা গঠনমূলকভাবে পুনরায় শুরু হয় — উদাহরণস্বরূপ, যদি ট্রাম্প ৫০% শুল্ক আরোপের হুমকি থেকে সরে আসেন — তাহলে ডলার শুধু পুনরুদ্ধারই নয়, এটির মূল্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। এই ক্ষেত্রে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1080–1.1190 রেঞ্জে ফিরে যেতে পারে।
তবে যদি বাণিজ্য উত্তেজনা আরও বাড়ে — বিশেষ করে যদি ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করেন এবং ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা নেয় — তাহলে EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1440 পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে (D1 টাইমফ্রেমে বলিঙ্গার ব্যান্ডের উপরের সীমা)। বর্তমান মার্কেটের সিগন্যাল বিবেচনায় রেখে বলা যায়, বাণিজ্য উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনাই বেশি।